ঢাকা,রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৭১৩জন বন্দির স্থলে ১০ হাজার ছাড়াল

অনলাইন ডেস্ক ::

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এক হাজার ৭১৩ জন ধারণ ক্ষমতার এই কারাগারে গতকাল বৃহস্পতিবার বন্দির সংখ্যা ১০ হাজার ৭৯ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ছয় গুণ বেশি। আগামী নির্বাচনের আগে এই সংখ্যার আরো নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করছেন কারাগারের কর্মকর্তারা।

রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও এই কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে পাঁচ হাজারের মতো বন্দি থাকত। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে বন্দির সংখ্যা ছিল সাড়ে ৯ হাজার। আর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এসে বন্দির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেল। যদিও অনেক বন্দি জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। আবার নতুন করে অনেক আসামি কারাগারে ঢুকছে। দৈনিক জামিনে মুক্তির চেয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসা আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় কারাগারে বন্দির সংখ্যায় এই রেকর্ড তৈরি হয়েছে। জেলার ৩২ টি থানা পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে যেসব আসামি গ্রেপ্তার করে তাদের সবাইকে আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

বিপুলসংখ্যক বন্দি রাখতে গিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। বন্দিরা ওয়ার্ডের কক্ষগুলোতে স্থান না পেয়ে ভবনের বারান্দায় স্থান নিয়েছে। কিন্তু পৌষের তীব্র শীতে তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজিরার প্রয়োজনে আসা বন্দিরা চরম শীত কষ্টের কথা জানিয়েছে।

বন্দির সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসাইন বলেন, ‘আজকের (বৃহস্পতিবার) সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী হাজতি, কয়েদিসহ মোট বন্দির সংখ্যা ১০ হাজার ৭৯ জন।’ বিপুলসংখ্যক বন্দি রাখতে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারাবিধি অনুযায়ী সব বন্দিকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

কারাগারের জেল সুপার মো. কামাল হোসেন সব বন্দিকে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বললেও গতকাল মামলার হাজিরা দেওয়ার প্রয়োজনে আসা কয়েকজন বন্দি বলেছে উল্টো কথা। তাদের মধ্যে একজন সাতকানিয়া থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জায়গা পেয়েছেন পদ্মা ভবনের বারান্দায়। তিনি মাত্র একটি কম্বল পেয়েছেন। ফ্লোরে একটি বিছানোর পর গায়ে দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় কম্বল তিনি পাননি। ফলে নিজের শরীরে যে শার্ট থাকে, সেটি গায়ে দিয়েই তিনি জবুথবু হয়ে রাত পার করেন। তাতে শীতের তীব্রতায় তিনি সর্দিজ্বরে ভুগছেন।

তাঁর পাশে থাকা আরেক হাজতি জানান, তিনি যমুনা ভবনের বারান্দায় জায়গা পেয়েছেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এই কর্মীর বাড়ি হালিশহর থানা এলাকায়। নগর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ১৫ দিন আগে। বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তিনি দুই দফা জামিন আবেদন করেও জামিন পাননি। সর্বশেষ গতকালও তাঁর জামিন শুনানি হয়েছে আদালতে। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।

এই হাজতি বন্দি বলেন, ‘শুধু একটি কম্বল পেয়েছি। এটি বালিশ হিসেবেও ব্যবহার করা যায় না। কারণ ফ্লোরে একটি বিছানোর প্রয়োজন হয়। হিমশীতল ঠাণ্ডায় শরীর যেন জমে যায় রাতে। এ কারণে বাসা থেকে মোটা চাদর আনতে হয়েছে।’ কারাগারে বন্দি থাকায় ওই আসামিরা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।

রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার একজন বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, ‘আমাকে কারাগারে যেভাবে রাখা হয়েছে, তা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই সরকার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কারাগারে আমাকে বন্দি করে রেখেছে। সেখানে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে না। এটা চরম অমানবিক।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী একজন বন্দি তিনটি কম্বল পায়। কিন্তু এই শীত মৌসুমে বন্দির সংখ্যা আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কারাগারে যে পরিমাণ কম্বল আছে, তা সব বন্দিকে তিনটি করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে কোনো কোনো বন্দিকে একটি করে কম্বল দিতে হয়েছে।

কারাগারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কম্বল আছে প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু বন্দির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন, নির্বাচনের পর অনেক আসামির দ্রুত জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন সংকট কেটে যাবে।

কিন্তু কারাগারের একজন ডেপুটি জেলার জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যে কদিন সময় আছে, তাতে আরো অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসতে পারে, তাদের কিভাবে সামাল দেওয়া যাবে, সেটাই এখন বড় চিন্তার কারণ।

পাঠকের মতামত: